সারাদেশে রেল যোগাযোগ বন্ধ
২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম | আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:০২ এএম
রেলের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারাদেশে বন্ধ রয়েছে ট্রেন চলাচল। কমলাপুরসহ সারাদেশের রেল স্টেশনগুলো ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার যাত্রী। বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রী বিক্ষোভের পাশাপাশি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। বেশিরভাগ মানুষ জানেনই না কি কারণে ট্রেন চলছে না। রেলের রানিং স্টাফরা চার বছর ধরে বেতন ভাতার দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণায়লের ঠেলাঠেলিতে ট্রেনের রানিং স্টাফদের সেই দাবি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অনড় কর্মীরা কর্মবিরতি থেকেও সরছেন না। গতকাল এ নিয়ে কমলাপুর রেল স্টেশন ও রেল মন্ত্রণালয়ে দফায় দফায় রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, রেলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা, মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বৈঠক হলেও সুরাহা হচ্ছে না। আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা জানান, রেল মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খান বিষয়টি জেনেও কোনো উদ্যোগ না নিয়ে এতোদিন রহস্যজনকভাবে নীরব ছিলেন। এখন ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় তার টনক নড়েছে। যেহেতু রেল কর্মীদের দাবির পেছনে বেতন-ভাতা-পেনশন জড়িত তাই রেল মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্তের দায় ঠেলে দিচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দিকে। আর অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিষ্কার জবাব, রেল কর্মীদের ‘অযৌক্তিক দাবি’ মানার সুযোগ নেই। অথচ এই ঠেলাঠেলি কয়েক বছর ধরেই চলে আসছে। এর আগেও রেলের রানিং স্টাফরা ধর্মঘটের ডাক দিলে মন্ত্রণালয় থেকে দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু এই ঠেলাঠেলির কারণে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এজন্য রেল মন্ত্রণালয়কে দায়ী করছেন আন্দোলনরত রানিং স্টাফরা। তারা বলেছেন, উপদেষ্টা এদিকে একটু নজর দিলেই চার বছর ধরে ঝুলে থাকা এ সমস্যার সমাধান সম্ভব হতো। কিন্তু তিনি গুরুত্বই দেননি। ব্যস্ত অন্য মন্ত্রণালয় নিয়ে।
জানা গেছে, রেলের রানিং স্টাফরা (লোকো মাস্টার, সহকারী লোকা মাস্টার, গার্ড, ট্রেন টিকিট পরীক্ষক) দৈনিক ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে বেসিকের (মূল বেতন) হিসেবে বাড়তি অর্থ পেতেন। যাকে রেলের ভাষায় বলা হয় মাইলেজ। প্রতি ১০০ কিলোমিটার ট্রেন চালালে রানিং স্টাফরা মূল বেতনের এক দিনের বেসিকের সমপরিমাণ টাকা অতিরিক্ত পেতেন। ৮ ঘণ্টায় এক দিনের কর্মদিবস ধরলে রানিং স্টাফদের প্রতি মাসে কাজ দাঁড়ায় আড়াই বা তিন মাসের সমপরিমাণ। এ ছাড়া অবসরের পর মূল বেতনের সঙ্গে অতিরিক্ত ৭৫ শতাংশ অর্থ যোগ করে অবসরকালীন অর্থের হিসাব হতো। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা এই সুবিধা ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর সীমিত করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ওই সময়ের পর নতুন করে নিয়োগ পাওয়া কর্মীরা পুরনোদের চেয়ে আরো কম সুবিধা পাবেন বলেও সরকার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই থেকে রানিং স্টাফরা বলে আসছেন, তারা এটা মানবেন না। মানলে তারা ওভারটাইম করবেন না। যেখানে ডিউটি টাইম ৮ ঘণ্টা পূর্ণ হবে সেখানেই তারা নেমে যাবেন। এর আগে একবার এই কথামতো চট্টগ্রামগামী এক ট্রেন থেকে মাঝপথে রানিং স্টাফরা নেমে গেলে যাত্রীরা বিপাকে পড়েন। ওই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন আওয়ামী সরকারের একজন মন্ত্রীও। এরপর থেকে রানিং স্টাফদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু চার বছরেও এর কোনো সমাধান হয়নি। এমনকি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রেল মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে নিয়োজিত উপদেষ্টা ফাওজুল কবীর খানও বিষয়টি সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেন নি।
এদিকে, কমলাপুর স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, ট্রেন না ছাড়ায় স্টেশনে বসে আছেন অনেকে। অনেকে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন রেল স্টেশনেই। ট্রেনযাত্রার এ অনিশ্চয়তার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। গন্তব্যে পৌঁছানের জন্য অনেক যাত্রী সকাল থেকে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন। আগে থেকে তারা টিকিটও সংগ্রহ করেছেন। তবে ছাড়ছে না ট্রেন। প্ল্যাটফর্মে বসে থাকাই তাদের ভরসা। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নারী ও শিশুরা। তবে কখন ট্রেন ছাড়বে সে বিষয়ে জানে না কেউই।
বাতিল হওয়া ট্রেনের টিকিটের টাকা যাত্রীরা ফেরত পাবেন বলে জানিয়েছে রেলওয়ে। রেলের বিকল্প হিসাবে গুরুত্বপূর্ণ রেল রুটসমূহে যাত্রী পরিবহনের জন্য বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে। রুটভিত্তিক ট্রেন টিকিটের যাত্রীদের মাইক দিয়ে ডেকে বাসে তোলা হয়। বাস ভর্তি হলেই গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। একটি বাস ছেড়ে গেলে অন্য আরেকটি বাস যাত্রী নেওয়ার জন্য প্রবেশ করে। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হতে চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট, খুলনা, কুমিল্লা, বগুড়া ও ময়মনসিংহগামী যাত্রীগণ তাদের ক্রয়কৃত রেল টিকেটে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের মাধ্যমে ভ্রমণ করেন এবং এসকল স্থান হতে ঢাকাতে এই সার্ভিসের মাধ্যমে আসতে পারবেন বলে জানিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। বিক্ষোভের পর টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে তারা বাড়ি ফিরেছেন। গতকাল সকালে স্টেশনে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন কয়েকশো যাত্রী। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক ময়েন উদ্দিন ইনকিলাবকে জানান, যারা কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছিলেন, তাদের কাউন্টার থেকেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর যারা অনলাইনে টিকিট কাটেন, তাদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফেরত দেয়া হয়েছে। স্টেশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, কর্মবিরতি চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন খুলনার কয়েক হাজার যাত্রী। খুলনা রেলওয়ে স্টেশন থেকে টিকিট করেও গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন যাত্রীরা। টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন অনেকেই। কেউ কেউ আবার বিকল্প পথে যাত্রা করছেন। বাংলাদেশ রেলওয়ের খুলনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার ওহিদ খান জানান, গতকাল সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ। যাত্রীদের অনেকে আসছেন। টিকিট কাউন্টার থেকে টিকিট ফেরত দিয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছেন। স্টেশনে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন চাপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর ও সান্তাহারের যাত্রীরা।
বেনাপোল অফিস জানায়, বেনাপোল থেকে গতকাল সকাল থেকে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কোন ট্রেন ছেড়ে যায়নি। এতে স্টেশনে আসা পাসপোর্ট ও লোকাল যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান জানান, রানিং স্টাফদের কর্মবিরতির কারণে বেনাপোল স্টেশন থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যায়নি। বাইরে থেকে কোনো ট্রেন আসেনি। সকালে কয়েকজন যাত্রী স্টেশনে আসলেও ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় বুকিং অফিসে টাকা ফেরত নিয়ে চলে যান।
রাজবাড়ী জেলা সংবাদদাতা জানান, ট্রেন বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রাজবাড়ীতে ট্রেনে চলাচলকারী যাত্রীরা। রাজবাড়ী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আব্দুর রহমান চৌধুরী জানান, কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে আমরা যথাযথ ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করছি এবং আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে।
হিলি (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, হিলি-সান্তাহার, হিলি-পার্বতীপুর রুটের চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীরা। যাত্রীরা জানান, ট্রেন বন্ধ থাকার বিষয়টি তারা জানেন না। হিলি রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার বিশ্বনাথ কয়াল জানান, রেলওয়ের রার্নিং স্টাফরা মাইলেস ভাতা বৃদ্ধিসহ ৮ ঘণ্টা ডিউটির দাবিতে কর্মবিরতি পালন করায় গতকাল থেকে সান্তাহার-পাতর্বীপুর রুটসহ সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ।
পার্বতীপুর (দিনাজপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, পশ্চিমাঞ্চলে বৃহত্তর রেলওয়ে জংশন পার্বতীপুর সেখান থেকে কোথাও কোনো আন্তঃনগর লোকাল, মালবাহী ট্রেন সারাদিন চলাচল করেনি। পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে প্রতিদিন ৩২ জোড়া আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চলাচল করে।
বিভাগ : জাতীয়
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল লিটারে ১ টাকা
গ্রাফিতি মুছে ফেলায় উত্তাল উত্তরা
গৃহযুদ্ধে জ্বলছে কঙ্গো!
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ইয়ামিনের অসুস্থ বাবার পাশে ইউএনও
খেলাফত মজলিস ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ শাখা পুনর্গঠন সম্পন্ন
দ্রত বর্ধনশীল পেকিন জাতের হাঁস পালনে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে নওগাঁর গ্রামীণ গৃহবধূরা
ভৈরবের সুমন মিয়া অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার চেষ্টায় ভূমধ্যসাগরে মৃত্যু
জনগণ আমাদেকে সুযোগ দিলে শাসক হবো না, চৌকিদার হবো : ড. ফারুকী
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বললেন শাপুর জাদরান
রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা দাবিতে টঙ্গীবাড়ি জাসাসের কর্মী সম্মেলন
পাকিস্তানে ত্রিদেশিয় সিরিজে নিউজিল্যান্ড দলে ডাফি
জুলাই গনহত্যার জড়িতদের বিচারের দাবিতে সিলেটে ছাত্রশিবিরের 'গণমিছিল'
মতলবের মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
টঙ্গীর তুরাগ তীর মুখি মুসুল্লিদের ঢল অব্যাহতঃ ইজতেমা ময়দানে সর্ববৃহৎ জুমার নামাজ অনুষ্ঠিত
নরসিংদীতে ২৫ জন মহিলা কোরআনের হাফেজাদের সংবর্ধনা
গ্রাফিতি মুছে ফেলায় আন্দোলনে উত্তাল উত্তরা
প্লে অফে মুখোমুখি রিয়াল-সিটি
সিলেটে গণসমাবেশ: সকল পাথর ও বালু মহাল খুলে দেওয়ার দাবি, নইলে কঠোর কর্মসূচি
লেবার কোর্ট বার এসোসিয়েশন নির্বাচনে ১৫ সদস্যের মধ্যে সাত্তার-শাহেদ প্যানেলের ১১টিতে জয়
ছয় মাসেও অধরা মানুষ মারার গল্পে ভাইরাল এসপি ইকবাল